বিচার বিভাগ বনাম সরকারঃ নাটক নাকি বাস্তবতা?





বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর ক্রমশই সরকার বনাম বিচার বিভাগের মতবিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এতদিন মুখে স্বাধীন বিচার  বিভাগ প্রতিষ্ঠার বুলি বলে আসলেও তা যে শুধু কাগুজে কথা, এখন সরকার নিজেই প্রমান দিচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় বিচার বিভাগ কোনভাবেই স্বাধীন হতে পারেনি । এমতাবস্থায়  সাধারন মানুষ যাবে কোথায়? ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়ে, আদালত যদি তার নিজের শক্তিতে না চলে কারো প্রভাবে চলে, আদালতের উপরে মানুসের আস্থা হারাবে । দেশ থেকে ন্যায় বিচার উঠে যাবে । বিচার আর জবাবদিহিতার অভাবে সন্ত্রাস আর দুর্নীতির পরিমাণ বেড়ে যাবে । আমাদের বিচার বিভাগ-নির্বাহী বিভাগ,সরকারের কাছে কতটা অসহায়, তা একটি উদাহারন দিলে বুঝা যাবে । ২৮ জুলাই ২০১৭ তে প্রথম আলোর সংবাদ, “ জোসেফসহ ৫৩ বন্দীর সাজা মওকুফ হচ্ছে [১] ”। এবার দেখুন কে এই জোসেফ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমদের আপন ভাই হচ্ছে এই জোসেফ [২]। 

তবে বিচার বিভাগ নিয়ে এবার জোর গলায় কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শুক্রবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিদর্শন  শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে  অর্থমন্ত্রী বলেন, “ বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবারই বাতিল করবে তা সংসদে ততবারই পাস করা হবে [৩] ”। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য যেমন বিচার বিভাগের প্রতি অসম্মান-অবমাননা, তেমনি বিচার বিভাগের পরাধীনতার প্রতীক । 

অর্থমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবারই বাতিল করবেন, সংসদে তা ততবারই পাস করা হবে। বিচারপতিদের চাকরি সংসদই দেয়, সুতরাং তাদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই থাকা উচিত।
তিনি বলেন, এটা আমরা আবারো এসেমব্লিতে পাশ করবো। এই কনস্টিটিউশনাল এমেন্ডমেন্ড আবারো পাশ করবো এবং অনবরত করতেই থাকবো, দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যায়। বিকজ জুডিশিয়ারি পজিশন আমার মতে আনটেরিবল।অর্থমন্ত্রী বলেন, মানুষের প্রতিনিধির উপর তারা খোদগারি করবে তাদের আমরা চাকরি দেই। 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত
অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে জাতি যারপরনাই হতাশ । উনার একথা বলার আগে ভাবা উচিৎ ছিল যে, চাকরি দেন আপনি, কিন্তু বেতন কিন্তু দেন জনগণের টাকা থেকে, সরকারের কারো পকেটের টাকা থেকে নয় । তবে আমরা উনার এ ধরনের রাবিশ, ভোগাস কথা শুনতে-শুনতে  অভ্যস্ত হয়ে আছি । 
তবে এসব ছাপিয়ে ছিন্তার বিষয় হচ্ছে, সেই স্কাইপ কেলেঙ্কারির মতো এই ব্যাপারগুলো হয়ে দাঁড়ায় কিনা যে, “আমি দাঁড়াইয়া যামু, আপনি আমারে ধমক দিয়া বসাইয়া দিবেন.....................লোকে দেখুক, আমাদের মধ্যে কোনো খাতির নাই ” [৪]। 



Comments

Popular posts from this blog

দেশের মানুষ কতটা বিশ্বাস করে আওয়ামী মন্ত্রীদেরকে?

বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড(২০১২): পরিবেশনায় ছাত্রলীগ, প্রযোজনায় আওয়ামীলীগ

ইলিশের একমাত্র মালিক এখন বাংলাদেশ